যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণা অনুযায়ী, শরীরের নিচের অংশে ঢিলেঢালা পোশাক পড়লে পুরুষদের বীর্য বা শুক্রাণুর ঘনত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড টিএইচ চ্যান স্কুল অব পাবলিক হেলথ’- এর গবেষণায় উঠে আসে যে, যারা প্যান্টের নিচে ঢিলেঢালা বক্সার জাঙ্গিয়া পরে তাদের বীর্য ঘনত্ব আঁটোসাটো আন্ডারপ্যান্ট (জাঙ্গিয়া) পরা ব্যক্তিদের চেয়ে ২৫% বেশী হয়ে থাকে। ৬৫৬ জন পুরুষকে নিয়ে চালানো হয় এই গবেষণা।
ঢিলে জাঙ্গিয়া পরার কারণে অন্ডকোষের আশেপাশে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকা বীর্য ঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণ হতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা। খবর বিবিসির
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাসটি পুরুষদের উর্বরতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (৯২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রার ওপরে বীর্য উৎপাদন স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে কম হয়।
কয়েক ধরণের জাঙ্গিয়া পরার কারণে, যেমন জকি শর্টস (আঁটোসাটো জাঙ্গিয়া), অন্ডকোষ দেহের সঙ্গে অনেকটাই লেগে থাকে, যে কারণে অন্ডকোষের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। এই ধরণের জাঙ্গিয়ার তুলনায় বক্সার শর্টস পরলে অন্ডকোষের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম বৃদ্ধি পায়।
ভিন্ন ধরণের জাঙ্গিয়া পরায় বীর্য ঘনত্ব পরিবর্তিত হলেও বীর্যের আকৃতি বা ডিএনএ’র গুণগত মানে কোনো পরিবর্তন হয় না।
এই গবেষণায় পুরুষদের বয়স, দেহের ওজন ও উচ্চতার সামঞ্জস্য, ধূমপান ও মাদক গ্রহণের প্রবণতাসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নেন গবেষকরা।
তবে বীর্যের ঘনত্বের তারতম্যের প্রধান কারণ জাঙ্গিয়া আঁটোসাটো না ঢিলেঢালা, সেটিকেই চিহ্নিত করছেন তারা।
হিউম্যান প্রোডাকশন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় আরো উঠে আসে যে, মস্তিষ্ক থেকে নির্গত হওয়া একধরণের হরমোনের (ফলিকল স্টিমুলেটিং হরমোন বা বীর্যকোষ উদ্দীপক হরমোন) কারণে বীর্য উৎপাদন হয়ে থাকে।
অন্ডকোষের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ার পর বীর্য উৎপাদনের হার যখন কমে যেতে থাকে তখন মস্তিষ্ক এই হরমোন নির্গমন শুরু করে।
গবষেণায় দেখা যায়, যারা ঢিলঢালা জাঙ্গিয়া পরে থাকে তাদের দেহে এই হরমোনের উপস্থিতি আঁটোসাটো জাঙ্গিয়া পরা পুরুষদের চেয়ে ১৪% কম।
শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যান্ড্রোলজির (শুধুমাত্র পুরুষদের শারীরিক সমস্যা নিয়ে দেহতত্বের যে বিভাগ গবেষণা করে) অধ্যাপক অ্যালান পেইসে, যিনি এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, বলেন ভিন্ন ধরণের জাঙ্গিয়া পরার কারণে বীর্যকোষ উদ্দীপক হরমোনের তারতম্যের ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে ‘আঁটোসাটো প্যান্ট পরা পুরুষদের অন্ডকোষ ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।’
এই গবেষণায় শুধু পুরুষদের বীর্য ঘনত্বের তারতম্য বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে। কাজেই এর সঙ্গে উর্বরতার খুব একটা সম্পর্ক নেই।
অধ্যাপক স্পেইসে বলেন, ‘যাদের বীর্য উৎপাদনের হার অপেক্ষাকৃত কম, সেসব পুরুষ আঁটোসাটো প্যান্ট বা জাঙ্গিয়া ছেড়ে ঢিলে জাঙ্গিয়া পরা শুরু করলে তাদের বীর্য ঘনত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে।’
গবেষকদের একজন হোর্হে শাভেরো বিবিসিকে বলেন, ‘দেহের সমস্ত বীর্য নতুন করে উৎপাদন হতে প্রায় তিনমাসের মতো সময় লাগে। কাজেই আগে থেকে পরিকল্পনা মাফিক কাজ করলে বীর্য ঘনত্ব ও পরিমাণ বৃদ্ধি করা সম্ভব।’
‘অনুর্বরতা শুধু নারীদেরই সমস্যা নয়। প্রজনন একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা। সন্তান জন্মদানে দুজনকেই যেহেতু ভূমিকা রাখতে হয়, তাই দুজনকেই এ বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত।’